কাল জাসদের সংগ্রাম ও গৌরবের ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

20230.jpg

বিশেষ প্রতিবেদক ::

আগামীকাল ৩১ অক্টোবর ২০২৩ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাজনৈতিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে আগামীকাল ৩১ অক্টোবর ২০২৩, মঙ্গলবার, বিকাল ৩ টায়, ৩৫-৩৬, বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে দলের ঘোষণা ছিলো জাসদের ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের অনুষ্ঠানস্থল হবে ইনষ্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনীয়ার্স, বাংলাদেশ এর মিলনায়নত। কিন্তু গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাসী হামলায় ইনষ্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনীয়ার্স, বাংলাদেশ এর মিলনায়নত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পূর্ব নির্ধারিত অনুষ্ঠানস্থল পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ তাহের মিলনায়তন করা হয়েছ।

জাসদের এবারের আলোচনা সভায় আলোচক হিসাবে অংশগ্রহণ করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক জনাব আমির হোসেন আমু এমপি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন এমপি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (মা-লে) এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টি-জেপি এর মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমপি, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ডা. অসিত বরণ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর আহ্বায়ক জনাব রেজাউর রশিদ খান, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাম (মো) এর সদস্য জনাব ইমসাইল হোসেন। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি।

জাসদের সংক্ষিপ্ত ইতহাস
মুক্তিযুদ্ধোত্তর সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সমাজকে স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের আকাংখা ও চেতনায় পুনর্গঠন এবং গড়ে তোলার জন্য গত শতকের ষাট দশকে তৎকালীন ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা ‘স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস’-এর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে সামনে রেখে যে নেতা-সংগঠক-কর্মীগণ শিক্ষার আন্দোলন, সামরিক শাসন বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় জাতীয় মুক্তি এবং স্বাধীনতার সংগ্রাম, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে আপোষহীনভাবে নির্ধারক ও বিপ্লবী ভূমিকা পালন করেছেন, সেই বিপ্লবী ধারার ছাত্র-যুবক-শ্রমিক নেতৃত্ব বাঙালি জাতির অবিসম্বাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে উপনিবেশিক আমলের রাষ্ট্র-প্রশাসন-আইন-কানুন এবং পুঁজিবাদী পথ পরিহার করে ১৯৭০ সালের নির্বাচনী অঙ্গীকার, স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের স্বাধীনতার ইশতেহার, মুজিব নগরে গঠিত প্রথম বাংলাদেশ সরকারের স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রের আলোকে সমাজতান্ত্রিক পথ গ্রহণ এবং মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠা জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক শক্তির সমন্বয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ‘বিপ্লবী জাতীয় সরকার’ গঠনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

তখন চলমান বাস্তবতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিপ্লবী জাতীয় সরকারের প্রস্তাব গ্রহণ করেন নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিপ্লবী জাতীয় সরকারের প্রস্তাব গ্রহণ না করায় তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে একটি রাজনৈতিক দল গড়ে তোলার পথে অগ্রসর হন। এসব ছাত্র-যুব নেতৃত্বের সাথে যুক্ত হন মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী কয়েকজন সেক্টর কমান্ডার এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার কয়েকজন স্বনামখ্যাত আসামী।

ফলে ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে ৯ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত মেজর এম এ জলিল এবং ছাত্রলীগের এককালীন সাধারণ সম্পাদক, সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ডাকসুর প্রথম ভিপি, স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের শীর্ষ নেতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিএলএফ-মুজিব বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের উপ-অধিনায়ক আ স ম আব্দুর রবকে যুগ্ম-আহ্বায়ক এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামী বিধান কৃষ্ণ সেন, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা শাহজাহান সিরাজ, সাবেক ছাত্র নেতা ও যুব নেতা নূর আলম জিকু, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামী ক্যাপ্টেন সুলতান উদ্দিন আহমেদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জননেতা এডভোকেট রহমত আলীকে সদস্য করে ৭ (সাত) সদস্যের কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ যাত্রা শুরু করে।

একই বছর ২২ ডিসেম্বর প্রথম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে অবসরপ্রাপ্ত মেজর এম এ জলিলকে সভাপতি এবং আ স ম আব্দুর রবকে সাধারণ সম্পাদক করে জাসদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। সদ্য স্বাধীন দেশে ক্ষমতায় থাকার সুযোগ পরিহার করে গঠিত জাসদের সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে পরিচালিত গণআন্দোলন ব্যাপক গণসমর্থন লাভ করে। দেশের ছাত্র-তরুণ-যুব-শ্রমিক সমাজ জাসদের প্রতি আকৃষ্ট হন।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ বিশ্বের দেশে দেশে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের অভিজ্ঞতায় বিকশিত শিক্ষা ও জ্ঞান তথা সমাজতান্ত্রিক বিশ্ববীক্ষাকে ধারণ করে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির ধারাবাহিকতা বহনকারী চিরায়ত ও প্রচলিত কমিউনিস্ট এবং সমাজতান্ত্রিক পার্টিগুলোর বাইরে গিয়ে বাংলাদেশের দেশীয় ও জাতীয় বাস্তবতার আলোকে সমাজতান্ত্রিক গণআন্দোলন গড়ে তোলার দেশজ ও জাতীয় পথ গ্রহণ করে। জাতীয় সমজতান্ত্রিক দল-জাসদ সমাজতান্ত্রিক গণআন্দোলনের লক্ষ্যে গঠিত একটি সমাজতান্ত্রিক গণসংগঠন।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সমাজতান্ত্রিক গণআন্দোলনের ধারাতেই ১৯৭৩ সালে ১ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গিয়ে জাসদ তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের চরমভাবে বহুমাত্রিক বাঁধার সম্মুখীন হয়। মেজর জলিল, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রশীদসহ কয়েকজন প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণার পরও পরবর্তীতে পরাজিত দেখানো হয়। উল্লেখ্য, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রশীদকে বিজয়ী ঘোষণা করেও পরবর্তীতে ঢাকা থেকে খন্দকার মোশতাককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। টাঙ্গাইল থেকে জাসদ প্রার্থী আব্দুস সাত্তার বিজয়ী হন। স্বতন্ত্র বিজয়ী প্রার্থী আব্দুল্লাহ সরকার জাসদে যোগদান করেন। আওয়ামী লীগ নেতা এ এইচ এম কামরুজ্জামান রাজশাহীর ২টি আসনে বিজয়ী হয়ে একটি আসন ছেড়ে দিলে, সে আসনের উপ-নির্বাচনে জাসদ প্রার্থী মাইনউদ্দিন আহমেদ মানিক বিজয়ী হন। তিনটি আসন নিয়ে জাতীয় সংসদে জাসদ সোচ্চার বিরোধী দলের ভূমিকা পালনের পাশাপাশি দেশব্যাপী গণআন্দোলন গড়ে তোলে।

জাসদের উপর ক্ষমতাসীন সরকার ও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ব্যাপক দমন-পীড়ন-নির্যাতন নেমে আসে। ১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জাসদের স্মারকলিপি প্রদানের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে রক্ষীবাহিনী পরিকল্পিতভাবে সরাসরি নির্বিচার গুলিবর্ষণ-হত্যাযজ্ঞ চালায়। গুলিবর্ষণে রফিকুল ইসলাম জাফর, জাহাঙ্গীর হোসেন, প্রবীর কুমার পাল, মোজাম্মেল হক ও মাহফুজউল্লাহসহ বেশ কয়েকজন জাসদ নেতা ঘটনাস্থলে নির্মমভাবে নিহত হন।

পূর্ব পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির অংশ হিসাবে সেদিনই জাসদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় সকল সদস্য এবং সারা দেশে জেলা-থানা পর্যায়ের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও প্রধান নেতৃত্বসহ জাসদের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে একযোগে গ্রেফতার করা হয়। জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও জাসদের মুখপত্র দৈনিক গণকণ্ঠ অফিসে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। সংসদীয় রাজনৈতিক দল হিসেবে জাসদের পথ অবরুদ্ধ করে দেয়া হয়।

১৯৭৪ সালে দেশে জরুরী অবস্থা জারি হলে জাসদের উপর রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন আরো বেড়ে যায়। হাজার হাজার নেতা-কর্মী খুন-জেল-জুলুম-হুলিয়ার শিকার হন। জেলের বাইরে থাকা জাসদ কর্মীদের অবস্থা ছিল বাঘের হিংস্র আক্রমণের মুখে হরিণ-শাবকের আত্মরক্ষা-প্রচেষ্টার মতো। এরকম পরিস্থিতিতে জেলের বাইরে থাকা জাসদের নেতা-কর্মীগণ আত্মরক্ষা এবং বিপ্লবী সংগ্রাম এগিয়ে নিতে প্রথমে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ও পরে বিপ্লবী গণবাহিনী গঠন করেন।

১৯৭৫ এর ২৫ জানুয়ারি বাকশাল গঠন করা হলে জাসদ নিষিদ্ধ হয়ে যায়। জাসদসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ হবার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক শুন্যতার সুযোগ নিয়ে খোদ বাকশালের অভ্যন্তরে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র শুরু হয়। চরম দমন-নির্যাতনের মধ্যেও জাসদ ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের পথে পা না বাড়িয়ে, ষড়যন্ত্র-চক্রান্তকারীদের সাথে হাত না মিলিয়ে ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে প্রকাশ্য রাজনৈতিক অবস্থান অব্যাহত রাখে।

খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে ষড়যন্ত্রকারীরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করে। এরকম সংঘাতময় পরিস্থিতিতে স্বাধীনতার পক্ষের সকল রাজনৈতিক দল হতবিহ্বল ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। বাকশাল সরকারের অনেকে খন্দকার মোশতাকের সাথে হাত মেলান, তার মন্ত্রী সভায় যোগ দেন।

তখন জাসদ কোনো ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে না থেকে তাৎক্ষণিকভাবে খন্দকার মোশতাকের ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে খন্দকার মোশতাকের বাসভবন কায়েকটুলি এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল সংগঠিত করে ও রুখে দাঁড়ায়। খন্দকার মোশতাকের ৮৩ দিনের শাসনেও পুরোনো কায়দায় জাসদের নেতা-কর্মীদের উপর খুন-গুম-জেল-জুলুম অব্যাহত রাখা হয়, কারাবন্দী সকল জাসদ নেতা-কর্মীকে কারাগারেই রাখা হয়।

খন্দকার মোশতাকের ক্ষমতা দখল এবং মোশতাক অনুসারী সেনা অফিসারদের উশৃংখলতা সেনাবাহিনীর মধ্যে চরম বিশৃংখল অবস্থা তৈরি করে। উচ্চাভিলাষী সামরিক অফিসাররা ক্ষমতার লোভে সেনাবাহিনীকে বিভক্ত করে ফেলে। তারা ক্ষমতার খেলায় গুলি-গোলার মুখে সিপাহীদের ঠেলে দেয়। এরকম পরিস্থিতিতে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ক্ষমতালিপ্সু অফিসার খালেদ মোশাররফ কর্তৃক সেনাপ্রধান জিয়াকে অপসারণ ও বন্দী করে নিজেকে সেনাপ্রধান ঘোষণা করেন।

বঙ্গবন্ধুর খুনী কর্নেল রশিদ-কর্নেল ফারুক চক্র মোশতাকের নির্দেশে জেলখানায় চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করলেও খালেদ তাদেরকে নিরাপদে দেশত্যাগ করার সুযোগ করে দেন। অফিসারদের বিশৃংখলায় এরকম জাতীয় সংকটময় ও অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে অবৈধ ক্ষমতা দখলদারের কবল থেকে দেশকে মুক্ত এবং সেনাবাহিনীতে শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে সাধারণ সিপাহীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিদ্রোহের প্রস্তুতি নেন। এ পরিস্থিতিতে সেনা ছাউনিতে রক্তারক্তির ঘটনা এড়াতে, সেনাবাহিনীতে শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে এবং অনিশ্চয়তা থেকে দেশকে রক্ষা করতে জাসদ কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে বিদ্রোহী সিপাহীদের শৃংখলার মধ্যে রেখে গঠনমূলক লক্ষ্যে পরিচালিত করতে উদ্যোগী ও সাহসী ভূমিকা নেয়। ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক সিপাহী জনতার অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়।

কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে বিদ্রোহী সিপাহীদের বন্দীদশা থেকে মুক্ত জিয়া সিপাহীদের ১২ দফা দাবির সাথে বেঈমানি করেন এবং কর্নেল তাহের ও জাসদ নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করেন। সামরিক আদালতে প্রহসনমূলক সজানো মামলার বিচারের রায়ে ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই কর্নেল তাহেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা এবং জলিল-রব-ইনুসহ জাসদ নেতৃবৃন্দকে যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদী কারাদন্ডে দন্ডিত করেন।

পূর্ববর্তী সরকারগুলোর মতই পাকিস্তানের অনুচর  জিয়ার সামরিক সরকারও স্বাধীন বাংলাদেশের বীরযোদ্ধা জাসদ নেতাকর্মীদের উপর চরম দমন-পীড়ন-নির্যাতন চালায়। বিশ্বের সকল সামরিক শাসকের মত জিয়াও তার অবৈধ দখল সামরিক শাসনকে বৈধতা দিতে এবং গণতন্ত্রের পোশাক পড়াতে ‘সেনানিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র’ চালুর পথ গ্রহণ করেন।

জেনারেল জিয়া নিজের রাজনেতিক উচ্চাভিলাস বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ন্ত্রণের জন্য ও পাকিস্তান পন্থী জামায়াতে ইসলামীকে বৈধতা দেয়ার হীন উদ্দেশ্যে ‘রাজনৈতিক দলবিধি ‘১৯৭৬ চালু করেন। জিয়ার এই দলবিধির অধীনে জাসদ ও সিপিবিকে বাদ দিয়ে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য দলকে রাজনীতি করার অনুমতি দেয়।

জাসদ জিয়ার রাজনৈতিক দলবিধিকে তোয়াক্কা না করে গণআন্দোলনের পথে অগ্রসর হয়। গণআন্দোলন জোরদার হবার প্রেক্ষাপটে জাসদ বিপ্লবী গণবাহিনীর কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে স্থগিত করে। জাসদ আরও গণতন্ত্র ও অংশগ্রহণমুলক গণতন্ত্র এবং পরিকল্পিত গণমুখী জাতীয় অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৮ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করে গণআন্দোলন জোরদার করে।

১৯৭৯ সালে জলিল-রব-ইনুসহ জাসদের শীর্ষ নেতৃত্ব কারাবন্দি রেখেই জিয়া তার সামরিক শাসনকে বৈধতা দেয়ার জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেন। জাসদ সামরিক শাসনের অধীনে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের নীতিগতভাবে বিরোধিতা করে; তার আগে অন্য দলগুলো পক্ষে থাকলেও জাসদ জিয়ার হ্যাঁ-না ভোটেরও বিরোধিতা করে।

আওয়ামী লীগসহ প্রায় সকল দল সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে অবস্থান নিলে অগত্যা জাসদও ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়। এ নির্বাচনে জাসদের ৯ জন প্রার্থী বিজয়ী হন। প্রাথমিকভাবে জাসদের আরও বেশ কয়েকজন প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হলেও পরবর্তীতে ফলাফল পরিবর্তন করে তাদের বিজয় ছিনিয়ে নেয়া হয়।

জেনারেল জিয়ার সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে জাসদ সংসদ ও রাজপথে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে। এ সময় জাসদ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির দ্বন্দ্ব’কে একটি মৌলিক দ্বন্দ্ব হিসাবে বিবেচনায় নিয়ে রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করে এবং জিয়ার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বৃহত্তর ঐক্যের নীতি-কৌশলের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ ও সিপিবিসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অপরাপর শক্তির সাথে ১০ দলীয় ঐক্য জোট গড়ে তোলে। এই রাজনৈতিক ঐক্যের বিরোধিতা করে জাসদের কতিপয় নেতা-কর্মী জাসদ ত্যাগ করে বাসদ গঠন করেন।

১৯৮২ সালে এরশাদের অবৈধ ক্ষমতা দখল ও সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে জাসদ আন্দোলন গড়ে তোলে এবং বৃহত্তর ঐক্যের নীতি-কৌশল প্রয়োগ করে আওয়ামী লীগসহ অপরাপর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সাথে ১৫ দলীয় জোট গড়ে তোলে। এরশাদ সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন-কৌশল নিয়ে জাসদের অভ্যন্তরে বিতর্কের এক পর্যায়ে জাসদের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম সিরাজুল আলম খান, জাসদের সাধারণ সম্পাদক আ স ম আবদুর রব প্রথমে রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণের ঘোষণা দিয়ে জাসদ থেকে সরে যান।

কিন্তু পরে আ স ম আবদুর রব ভিন্ন দল গঠন করেন। সভাপতি মেজর এম এ জলিলও জাসদ ত্যাগ করে ভিন্ন দল গঠন করেন। ১৯৮৬ সালে এরশাদ সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন কৌশল নিয়ে পরবর্তীতে জাসদসহ আন্দোলনকারী শক্তিগুলোর মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। পরবর্তীতে জাসদের উদ্যোগে ৫ দল, ৭ দল, ৮ দলের লিয়াজোঁ কমিটি গড়ে ওঠে এবং ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালে ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সামরিক শাসনের অবসান ঘটে।

জন্মের পর থেকে জাসদ সীমাহীন হত্যা-জেল-জুলুম-হুলিয়া-নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়। ফলে জাসদ সুস্থিরভাবে নির্বাচনী কৌশল গ্রহণ করে নির্বাচনী এলাকা ও নির্বাচনী শক্তি গড়ে তুলতে পারেনি। ১৯৯১ সালের এককভাবে জাসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে কিন্তু সাফল্য পায়নি। ১৯৯১-৯৬ সালে বেগম জিয়ার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জাসদ বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠন করে গণআন্দোলন সংগঠিত করে। পাশাপাশি জাসদ নেতা কাজী আরেফ আহমেদের উদ্যোগে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ঐতিহাসিক গণআদালত গঠিত হয় এবং গণআন্দোলন গড়ে ওঠে। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর তৎকালীন জাসদ (রব) সংসদে সমর্থন দিয়ে আওয়ামী লীগকে সরকার গঠন করতে সহায়তা করে এবং আ স ম আবদুর রবকে মন্ত্রী করে। পরে ১৯৯৭ সালে জাসদ ও বাসদের বিভিন্ন অংশ একত্রিত হয়ে সরকারে অবস্থানের পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রাজপথে বলিষ্ঠ অবস্থান গ্রহণ করে। যৌথ জাসদের সভাপতি হন আ স ম আবদুর রব এবং সাধারণ সম্পাদক হন জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু।

২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় এসে সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদি-জঙ্গীবাদি শক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা দান ও দুর্নীতি-দুঃশাসনের পথে এগুলে জাসদ দলীয় উদ্যোগে আন্দোলন গড়ে তোলার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। ২০০১ সালের পর নির্যাতন-দমনে বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগের পাশে জাসদ দাঁড়ায়। জাসদের উদ্যোগী ভূমিকায় ২০০৪ সালে কর্ণেল তাহের মিলনায়তন থেকেই একাধীক বৈঠকের পরে ১৪ দলীয় জোট গড়ে উঠে। এসময় আ স ম আবদুর রব আবারো দলীয় রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দেন। পরে ইউপিআর নামে সামাজিক শক্তি গঠন করেন।

২০০৭ সালে মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকার ক্ষমতা দখল করলে জাসদ অবিলম্বে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জাসদ ১৪ দলীয় জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ৩ টি আসনে বিজয়ী হয়। মহাজোট সরকারে জাসদের অংশগ্রহণ না থাকলেও সরকারের বাইরে অবস্থান করে জাসদ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকারকে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন করা, কর্নেল তাহের হত্যার বিচার সম্পন্ন করা, যুদ্ধাপরাধ বিচারের আইনগত বাধা অপসারণ করা, কৃষিতে ভর্তুকি ও দেশজ শিল্প-সেবাখাত সহায়তা প্রদান করা, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের সম্প্রসারণ করা, ডিজিটালাইজেশন, নারী ও শ্রমিক অধিকার সম্প্রসারণ ইত্যাদি বিষয়ে নীতিগত সমর্থন দেয়ার পাশাপাশি সংসদ-রাজপথে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জঙ্গিবাদ-মৌলবাদের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ অবস্থান নেয়।

এসময় জাসদ শ্রমিক-কৃষক-নারীর অধিকারের পক্ষে সোচ্চার ভূমিকা রাখে। পরবর্তীতে ২০১২ সালে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রীসভায় যোদানের আমন্ত্রণ জানান। জাসদ দলীয়ভাবে সম্মতি প্রদান করলে শেখ হাসিনা জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপিকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদান করেন। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি মন্ত্রীসভার সদস্য হলেও জাসদ সরকার-সংসদ-রাজপথে আদর্শগত অবস্থান থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জঙ্গিবাদ নির্মূল, শ্রমিক-কৃষক-নারীর অধিকারের প্রশ্নে সোচ্চার ভূমিকা পালন অব্যাহত রাখে।

২০১৩ সালের সূচনায় জাসদ যুদ্ধাপরাধ বিচারের যৌক্তিক পরিণতি প্রদান করতে ছাত্র-যুব-মুক্তিযোদ্ধাগণ শাহবাগে অবস্থান গ্রহণ করলে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি সে অবস্থানে অংশগ্রহণ করেন ও অবস্থানকে সংহত ও সম্প্রসারণ করার আহ্বান জানান। এই অবস্থান পরদিন থেকে গণজাগরণ মঞ্চ হিসেবে জনপ্রিয় গণআন্দোলনে পরিণত হয়।

২০১৪ সালে বিএনপি-জামাতের নির্বাচন বানচালের চরম অন্তর্ঘাত ও নাশকতার মধ্যেও সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও ধারাবাহিকতা সমুন্নত রাখতে জাসদ ১৪ দলগতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। এ নির্বাচনে জাসদ ৫ টি আসনে বিজয়ী হয় এবং নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপিকে পুনরায় তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদান করেন। জাসদ পূর্বের ধারাবাহিকতায় সরকার-সংসদ-রাজপথে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম অব্যাহত রাখে।

২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাসদ ১৪ দলীয় জোটগতভাবে অংশ গ্রহণ করে এবং ২টি আসনে বিজয়ী হয়। এ পরিস্থিতিতেও জাসদ পূর্বের ধারাবাহিকতায় সরকার বা সংসদে থাকা বা না থাকাকে বড় করে না দেখে বরাবরের মতই অন্যায়-অত্যাচার-দুর্নীতি-লুটপাটের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকে এবং এখনো রয়েছে।

১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে আজ পর্যন্ত বিগত ৫১ বছরে জাসদ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকা অব্যাহত রাখা, বিপ্লবী জাতীয় সরকার গঠন করা, হত্যা-খুনের রাজনীতি বন্ধ করা, সামরিক শাসন প্রতিহত করা, সীমিত গণতন্ত্রকে প্রত্যাখ্যান করে গণতন্ত্র এবং আরও গণতন্ত্রের উপাদান বিকশিত করা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা, সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ প্রতিহত করা, সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা মোকাবেলা করা এবং শ্রমজীবী-কর্মজীবী-পেশাজীবী-মেহনতি মানুষ-নারী-ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু, আদিবাসী জনগণের নিজস্ব দাবিদাওয়া অর্জনের আন্দোলনে গৌরবজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে।

বর্তমানের জাসদ ২০০১ সাল পরবর্তী রাজনৈতিক অবস্থানের ধারাবাহিকতায় প্রথমত, সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক সংগ্রাম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা-মৌলবাদ-জঙ্গিবাদের জন্মজমিন ‘সাংস্কৃতিক-সাম্প্রদায়িকতা’র বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি সাংস্কৃতিক সংগ্রাম পরিচালনা করছে। দ্বিতীয়ত, দুর্নীতি-লুটপাট অবসানে ‘সুশাসন প্রতিষ্ঠায়’ সমান্তরালভাবে আন্দোলন পরিচালনা করছে। তৃতীয়ত, জাসদ অর্থনীতি ও সমাজে সকল ধরনের বৈষম্যের অবসান করে দেশকে সমাজতন্ত্রের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য রাজনৈতিক সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে।

চলমান রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করা এবং সাম্প্রদায়িকতা-মৌলবাদ-জঙ্গিবাদের জন্মজমিন ‘সাংস্কৃতিক-সাম্প্রদায়িকতা’র বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি সাংস্কৃতিক সংগ্রাম পরিচালনা করার জন্য জাসদ ১৪ দলীয় জোটকে কার্যকর করার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দলসহ সকল অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল-ব্যক্তি-মহলের বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ দলের ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা কায়েমের চূড়ান্ত লক্ষ্যের অংশ হিসাবে সংবিধানের গোঁজামিল দূর করতে সংবিধান পর্যালোচনা, জাতীয় সংসদে উচ্চ কক্ষ গঠন করে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থা চালু, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালু, সিটি কর্পোরেশন-জেলা পরিষদ-উপজেলা পরিষদ-ইউনিয়ন পরিষদ-পৌরসভাসহ সকল স্থানীয় সরকারকে স্বশাসিত কার্যকর সংস্থা হিসাবে গড়ে তোলা, শাসন-প্রশাসন ব্যবস্থাকে আরও গণতান্ত্রিক ও অংশগ্রহণমূলক করা এবং সবক্ষেত্রে জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা, সর্বজনীন খাদ্য নিরাপত্তা, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা, একমুখী মানসম্পন্ন সর্বজনীন শিক্ষা, সর্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা ও সর্বজনীন ইন্টারনেট অভিগম্যতাসহ সংবিধানবর্ণিত মৌলিক অধিকারসমূহকে রাষ্ট্র কর্তৃক বাধ্যতামূলক বাস্তবায়ন, নারী-পুরুষ সমঅধিকার, সরকারি বেসরকারি খাত নির্বিশেষে শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম জাতীয় মজুরি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অবিচলভাবে সংগ্রাম পরিচালনা করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছে।

শাসক, শোষক, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদসহ প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী, রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে লাগাতার গণআন্দোলন গড়ে তোলায় জাসদের আপোসহীন দুঃসাহসী ভূমিকা এবং আন্দোলনের পথে জাসদের নেতা-কর্মীদের আত্মত্যাগের ইতিহাস শুধু বাংলাদেশেই নয় বিশ্ব রাজনীতিতে এক বিরল ঘটনা।

দেশ ও জাতির জন্য জাসদের বিগত ৫১ বছরের রক্তঝরা সংগ্রামের পথে শহিদ কর্নেল আবু তাহের বীরউত্তম, জাতীয় বীর শহিদ কাজী আরেফ আহমেদ, শহিদ এডভোকেট মোশাররফ হোসেন, শহিদ বুদ্ধিজীবী চিশতি শাহ হেলালুর রহমান, শহিদ স্বপন কুমার চৌধুরি, শহিদ ডা. শামসুল আলম খান মিলন, শহিদ সিদ্দিক মাস্টার, শহিদ নিখিল চন্দ্র সাহা, শহিদ শাজাহান সিরাজ, শহিদ আবু তাহের খান খসরু, শহিদ জয়নাল, শহিদ মুনির-তপন-জুয়েলসহ অগনিত শহিদ আত্মবলিদান দিয়েছেন। হাজার হাজার নেতা-কর্মী জেল-জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের দীর্ঘ ৫১ বছরের সংগ্রামী পথ চলায় বিভিন্ন সময় ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধ অনুধাবন, ব্যক্তিগত-গোষ্ঠিগত স্বার্থ ও ভিন্নমতের কারণে জাসদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অনেকে দল ত্যাগ করে ভিন্ন দলে যোগদান বা পৃথক দল গঠন করলেও জাসদের নেতা-কর্মীগণ তাদের আদর্শ-পতাকা-ঠিকানা বুকে আগলে রেখে জাসদকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। জাসদের কর্মীরা বার বার প্রমাণ করেছে জাসদ নেতাদের নয়, কর্মীদের দল। যার ফলের প্রতিষ্ঠাতারা দল ছাড়লেও কর্মীরা দলের নিশান উড্ডিন রেখেছেন সবসময়।

scroll to top